মিয়ানমার থেকে গত মাস দুয়েকের মধ্যে প্রানভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। এই সংকটের আশু সমাধানের পথ পরিস্কার নয় এখনো। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাস্তব অবস্থা জানতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করছেন। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান এবং রোহিঙ্গা সংকটের নানা দিক নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।
তিনি এই সংকটকে জাতিগত পরিচ্ছন্নতা অভিযান আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটা নি:সন্দেহে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। ২৫শে আগষ্ট থেকে শুরু হয় এই অভিযান এবং পরে সেটি গনহত্যায় রূপ নেয়। এটি সম্ভবত ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়ের একটি হয়ে রইবে। এই পূর্ব পরিকল্পিত অভিযানে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে পুরুষ নারী শিশু, নারী ধর্ষন করা হয়েছে, অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রান বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে”।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসণে বাংলাদেশ সাহায্য চায় কিনা এ প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন বলেন, “আপনারা জানেন প্রায় ৬ লক্ষ মিয়ানমারের নাগরিক, যাদেরকে রোহিঙ্গা বলা হয়; এখন বাংলাদেশে। দুই মাসে এ্যাতো মানুষ বাংলাদেশে আসার কারনে আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে। তাদেরকে আমাদের দেখভাল করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দয়া করে সহায়তা করছে। যুক্তরাষ্ট্রও অবশ্যই বিশাল সহায়তা করছে। ১০ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার ইতিমধ্যেই সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখি”।
রাষ্ট্রদূত বলেন রোহিঙ্গারা হচ্ছেন মিয়ানমারের নাগরিক; তাদেরকে বাংলাদেশী বলাটা ভুল, “অবশ্যই তারা মিয়ানমারের নাগরিক। আপনি কিভাবে জানেন যে তারা বাংলাদেশী। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নতো দেশগুলোর মধ্যে অত্যন্ত ভালো করছে। ফলে আমাদের দেশের মানুষ অভিবাসি হয়ে অন্য দেশে যাবে বলে মনে হয়না”।
অসহায় রোহিঙ্গা শরনার্থীদেরকে মানবিক ও মানবাধিকার সহায়তা দেয়ার চেষ্টা চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ১৫ই নভেম্বর মিয়ানমার সফর করবেন। মিয়ানমারের গনতন্ত্রায়নের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে কথা বলার কথা থাকলেও সেখানে মূলত তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসণ নিয়ে কথা বলবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র হেদার নুয়ার্ট বলেছেন বৃহস্পতিবার তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জনসংখ্যা, শরনার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হেনশ’র সঙ্গে বাংলেদেশের কক্সবাজার যাচ্ছেন যেখানেই মুলত রোহিঙ্গা শরনার্থীরা অবস্থান করছে বিভিন্ন শিবিরে বা খোলা আকাশের নীচে এবং বন বাদাড়ে।
বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের নেত্রী অংসাংসুচি উত্তর রাখাইন সফর করেন। ২৫শে আগষ্ট ঐ অঞ্চল থেকেই সংকটের সূত্রপাত ঘটে। রোহিঙ্গাদের একটি জঙ্গী গ্রুপ মিয়ানমার পুলিশের ওপর হামলা করলে রোহিঙ্গা গ্রামে শুরু হয় সেনা অভিযান এবং তারই প্রেক্ষিতে প্রান বাচাতে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে চলে যায়।
গনমাধ্যমের খবর অনুযায়ী পরবর্তীতে বাংলাদেশ মিয়ানমার সমঝোতায় দৈনিক ১৫০ থেকে ৩০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফেরত নেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৫শে আগষ্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৪ কোটি ডলার সহায়তা পাঠিয়েছে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সহায়তায়।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দন বলেন বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের তালিকা করার কাজ করছে। এতে করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কাজটি সহজ হবে। তিনি বলেন দুই দেশের সরকারই এই সংকট নিরসনে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।